হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয়ই হলো ইসরাফ বা অপচয়। বাংলায় অপচয় ও অপব্যয় শব্দ দুটি অনেক ক্ষেত্রে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এ দুইয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যয় করার নামই অপচয়, যা আরবীতে ‘ইসরাফ’ বলা হয়। অন্যদিকে, অপব্যয় হচ্ছে অন্যায় ও অযৌক্তিক উপায়ে সম্পদের অপব্যবহার, যাকে আরবীতে ‘তাবযীর’ বলা হয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পৃথিবীকে আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তু ধারা সুশোভিত করেছেন। তিনি অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ করে প্রতিটি বস্তুর সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করতে বলেছেন। ইসলামে সকল কিছুর ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রোয়জনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনি ইসরাইল-২৬ :২৭)।
ইসলামের দৃষ্টিতে ধন-সম্পদ হচ্ছে মানুষের কাছে আল্লাহর আমানত। হযরত আলী (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, সম্পদ হচ্ছে আমানত’। এজন্য কোনভাবেই আমানতের খিয়ানাত করা যাবেনা এবং তা সঠিক কাজে সর্বোত্তম পন্থায় ব্যবহার করতে হবে। এখন কেউ যদি এই সম্পদকে সঠিক পথে কাজে না লাগিয়ে তা অপচয় ও অপব্যয় করে তাহলে সে পাপী হিসেবে গন্য হবে। সূরাহ আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ এথেকে বুঝা যায় আল্লাহ তাআ’লার অসংখ্য নেয়ামত হতে মানুষের জন্য বৈধ বস্তু ভক্ষণ করা যাবে, তবে প্রয়োজনাতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
হাদিসে এসেছে, ‘যা ইচ্ছা পানাহার করো এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাক। এক, তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চাইতে বেশি না হওয়া চাই এবং দুই, গর্ব ও অহংকার না থাকা চাই। [বুখারী] তবে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্বাভাবিক সীমা দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর নবি (স.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যে সমস্ত ভা-ার পূর্ণ করে, তন্মধ্যে পেট হল সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশি করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য যেন নির্দিষ্ট করে।’ (তিরমিযী ২৩৮০, ইবন মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩২)।
তবে এর মানে এই নয় যে, অপচয় রোধ করতে গিয়ে কৃপণতা অবলম্বন করবে। মহান আল্লাহ কৃপণদের পছন্দ করেন না। অপচয় ত্যাগ করার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আর একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর পছন্দের বান্দাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭).যেহেতু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাই অপচয়, সেহেতু সবধরনের বিলাসিতাই অপচয়। তাই দামি খাবার, দামি পোশাক, অট্টালিকা, অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন অপচয়ের শামিল। এজন্যই রাসূল (সাঃ)আমাদের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত ও উত্তম আদর্শ হওয়া চাই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য অফুরন্ত নিয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন। এবং তাঁর দেওয়া নিয়ামতগুলো যথাযথভাবে ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নেয়ামতের সঠিকভাবে ব্যবহার ও শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।