মাওলানা আলতাফ হোসেন | পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য খাবার গ্রহণ অপরিহার্য। নিয়মিত যথাযথ পরিমাণ খাবার গ্রহণ ছাড়া সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অনেক হালাল ও পবিত্র খাবার দান করেছেন, আবার অনেক অপবিত্র ও হারাম খাবারও সৃষ্টি করেছেন, মানুষের কর্তব্য শুধু হালাল ও পবিত্র খাবারই গ্রহণ করা। কোরআনে আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ كُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
হে মানুষ, পৃথিবীতে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু। (সুরা বাকারা: ১৬৮)
এ আয়াতে আল্লাহ হালাল খাবার গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অপবিত্র ও হারাম খাবার যেমন মদ, শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ, একেবারে না খেয়ে থাকাও নিষিদ্ধ। সুযোগ থাকার পরও যথাযথ পুষ্টিগ্রহণ না করে শরীরের ক্ষতি করা, নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া বৈধ নয়। আবার অতিভোজনও শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও বহু রোগের কারণ। আল্লাহ কোরআনে খাবারের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। অতিভোজন অপচয়ের একটি প্রকার। আল্লাহ বলেন,
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
তোমরা খাও, পান করো, অপচয় থেকে বিরত থাক, আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ: ৩১)
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নত বা জীবনাদর্শ থেকেও আমরা বুঝতে পারি পরিমিত আহারের গুরুত্ব। তিনি নিজে পরিমিত আহার করতেন, অন্যদেরও পরিমিত আহারে উৎসাহিত করতেন। অতিরিক্ত আহার করতে নিষেধ করতেন। মিকদাম ইবনে মা’দিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ طَعَامٌ وَثُلُثٌ شَرَابٌ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ
মানুষ তার পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র ভর্তি করেনা। আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট যার মাধ্যমে সে নিজের কোমর সোজা রাখতে পারে। যদি এর বেশি খাওয়া প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং অপর তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৮০)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
الْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ
মুমিন এক পেটে খায় আর কাফের সাত পেটে খায়। (সহিহ বুখারি: ৫৩৯৩) অর্থাৎ অতিভোজন কাফেরের বৈশিষ্ট্য, মুমিনের অতিরিক্ত আহার করে না।
সুস্থ থাকতে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নত অনুসরণ করুন। পেট পুরোপুরি ভরে খাবেন না। পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার খান, এক ভাগ পানি খান, এক ভাগ খালি রাখুন। যেভাবে ওপরে উল্লেখিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু ক্ষুধা লাগলেই খাবার খান। ক্ষুধা ছাড়া অপ্রয়োজনে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মাঝে মাঝে নফল রোজা রাখার চেষ্টা করুন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। আইয়ামে বীজ অর্থাৎ হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। সুন্নত অনুসরণ করে এ দিনগুলোতে রোজা রাখার চেষ্টা করুন