আমরা জানি-মেধা, শ্রম ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্থসম্পদের মালিক হওয়ার সুযোগ সমাজে আছে। তবে তা হতে হবে আইন ও নিয়মের মধ্যে। পরিতাপের বিষয়, সমাজে একশ্রেণির মানুষ অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। আরও ভয়াবহ ব্যাপার-তাদের অনেকেই আবার নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে অসাধু উপায়ে অর্জিত সম্পদ স্ত্রী-সন্তানের নামে রাখছে অথবা বিনিয়োগ করছে। ফলে স্ত্রী-সন্তানের আয়ের উৎস না থাকলেও তারা বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তবে অনেক ক্ষেত্রেই শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে দুর্নীতিবাজের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও আইনের আওতায় আসছেন। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এমন একাধিক ঘটনা আলোচিত হওয়ায় এ ধরনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দুদকের অনুসন্ধান ও মামলায় বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবী ও রাজনীতিকের সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ফলে অন্যের নামে সম্পদ করেও সেসব দুর্নীতিবাজ তো পার পাচ্ছেনই না, সঙ্গে ফাঁসছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানও। এমনকি স্বামীর অপরাধলব্ধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করতে গিয়ে স্ত্রীর কারাবাসের নজিরও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তি না হওয়ার কারণেই তারা বহুমাত্রিক অপরাধে জড়াচ্ছেন। এটাও সত্য, অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানরা সচেতনতার অভাবে না জেনে এই দায় বহন করেন। আবার কেউ কেউ পরিবারের কর্তাকে দুর্নীতি করতে প্ররোচিতও করেন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই দুর্নীতিবাজের শাস্তি হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তাই সমাজ থেকে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, দুর্নীতি বন্ধে পরিবার থেকেই প্রতিবাদ শুরু হওয়া উচিত। পরিবারের যিনি উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার বৈধ আয় অনুযায়ী অন্য সদস্যরা জীবনমান সাজালে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা না করে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর বাড়তি চাপ দেওয়ায় তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জনের পথে পা বাড়ান।
একপর্যায়ে তা ব্যাপক আকার ধারণ করলে দুর্নীতিলব্ধ আয় বৈধ করতে তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানের নামে সম্পত্তি কেনেন। স্ত্রী-সন্তানরাও এর বিরোধিতা না করে ভোগ করেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের প্রবণতা হ্রাসে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।