পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে কাঁঠাল। মৌসুমের শুরুতেই কাঁঠালে ঠাসা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজার। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাজরে সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করেছে মৌসুমী ফল কাঁঠাল। পাহাড়ের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে জাতীয় ফল কাঁঠাল।
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাঁঠালে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজন। কাঁচা কাঁঠাল রোগ-ব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।
খাগড়াছড়িতে কাঁঠালের সব থেকে বড় হাট বসে গুইমারা ও মাটিরাঙ্গায়। মঙ্গলবারে গুইমারা আর শনিবারে মাটিরাঙ্গায় কাঁঠালের বড় হাট বসে।
শনিবার হাটবার হলেও বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিকাল থেকেই প্রত্যন্ত জনপদসহ আশপাশের কয়েকটা উপজেলা থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন মাটিরাঙ্গা বাজারে।
অপরদিকে সোমবার সকাল থেকে গুইমারা বাজারে আসতে শুরু করে কাঁঠাল। এ দুই দিন মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের বিশাল অংশজুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।
শনিবারের হাটকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবারেই মাটিরাঙ্গায় জড়ো হন নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তারা ট্রাকে ট্রাকে কাঁঠাল নিয়ে যান সমতলের জেলাগুলোতে। সমতলের জেলাগুলোতে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা ব্যাপক বলে জানান বাজারে আসা এসব পাইকাররা।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার কাঁঠালের হাট ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় পাইকার ও বাগানীরা কাঁঠালের স্তুপ সাজিয়ে বসে রয়েছেন। প্রতিটি স্তুপে রয়েছে শত শত কাঁঠাল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে কিনছেন পছন্দের কাঁঠাল।
স্থানীয় বিক্রেতা আর পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমতলে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা থাকায় তারা অনেকটা চড়া দামে কিনছেন পাহাড়ের কাঁঠাল।
মাটিরাঙ্গা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় এ কাঁঠালের হাটে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ ছাড়াও লোগাং, তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ি, মাইসছড়ি ও ভুয়াছড়ি থেকে ট্রাক ও চাঁদের গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল আনে বিক্রেতারা। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৭০ টাকা দরে। সমতলের জেলাগুলোতে এ কাঁঠালের দাম তিনগুণেরও বেশি।
মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল বিক্রেতা মো. নুর নবী বিজনেস ডাইজেস্টকে জানান, মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন বাগান ক্রয় করি। পরে মে মাসের শেষ থেকে জুলাই পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্থানীয় বাজার ছাড়াও সমতলের বিভিন্ন আড়তে সেগুলো বিক্রি করা হয়। এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বিজনেস ডাইজেস্টকে বলেন, এখানকার কাঁঠালের ব্যাপারে চাহিদা থাকলেও এবছর দাম তুলনামূলক বেশি।
চাঁদপুরের পাইকার মোতালেব মিয়া বলেন, স্থানীয় পাইকারদের কারণে চড়া দামে কাঁঠাল কিনতে হয়। ফলে লাভ কম হয়।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার দাবি, এখানকার কাঁঠালের কদর রয়েছে চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।
মাটিরাঙ্গা বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে প্রায় অর্ধশত ট্রাক কাঁঠাল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এছাড়া গাড়িতে কাঁঠাল লোড-আনলোডসহ অন্যান্য কাজে অন্তত দুইশ শ্রমিক এ বাজার দিয়ে পরিবার চালায়।
তবে খাগড়াছড়িতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর।
তিনি বলেন, একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা বাগানিদের দীর্ঘদিনের দাবি। সেটি হলে বাগানিরা আরও লাভবান হতো এবং এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতো।