মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স :
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের অধ্যাপকের সাথে আমার কথা হচ্ছিল বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরা নিয়ে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন ঘোর সমর্থক। যেদিন আদালত বুয়েটে রাজনীতি করতে বাধা নেই, এমন রায় দেয়, সেদিন তিনি খুব আফসোস করলেন। আফসোসের সাথে তার ক্ষোভও ঝরে পড়ছিল। ক্ষোভ থেকে হতাশ হয়ে পড়লেন এবং বললেন, খুব ভুল হয়ে যাচ্ছে, খুব ভুল হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না, ঠিক হচ্ছে না। আবার আশাবাদী হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এটা ঠিক করে দেবেন। কারণ, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে তাদের মতো করে চলতে দিতে হয়। বুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো বিশেষায়িত গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে অনেকটা সুনসান পরিবেশে গুণগুণ করে পড়াশোনা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘোরের মধ্যে থাকতে হয়। কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য কিংবা সোরগোল হলেই তাদের পড়ায় বিঘ্ন ঘটে। চিন্তায় ছেদ পড়ে। পড়া হয় না। গবেষণা হয় না। এটা নিরবিচ্ছিন্ন একটা কাজ। তিনি বলেই যাচ্ছিলেন। বললেন, রাজনীতি করার জন্য আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখা খুব জরুরি। ২০১৯ সালে আবরার হত্যাকান্ডের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর দেখুন কোনো ধরনের গ্যাঞ্জাম ছিল না। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে চার বছর ধরে পড়াশোনা করেছে। এখন রাজনীতি চালু হওয়ায় এ পরিবেশটা আর থাকবে না। মৌলবাদী বলেন আর জঙ্গিবাদী বলেন, এ অভিযোগ তুলে ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে একটি সংগঠনের দাবির মুখে তা চালু করা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়। সরকারের নানা গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। বুয়েটে যদি ঐ ধরনের কোনো কিছু চলে, তাহলে গোয়েন্দারা বা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারে। ভদ্রলোক মাথা নেড়ে আফসোস করতে লাগলেন। বলতে লাগলেন, এটা ঠিক হচ্ছে না, কোনোভাবেই ঠিক হচ্ছে না। গবেষণার কপালে পেরেক ঠুকে দেয়া হলো।
দুই.
কিছু কিছু বিষয় আছে, যেগুলো পড়ার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন শান্ত পরিবেশ প্রয়োজন। কারণ, এগুলোর সাথে গবেষণা জড়িয়ে আছে। গবেষণা করতে হলে আলাদা পরিবেশ প্রয়োজন। গবেষককে একেবারে খোলসের মধ্যে বন্দি করে রাখতে হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন নোবেল জয়ী সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ড. রিচার্ড আর. আর্নস্ট। এক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে গবেষণার গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেছিলেন, আমার বাসায় কোনো টেলিভিশন নেই। তার ছোট্ট এ কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি যখন গবেষণায় মগ্ন থাকেন, তখন কোনো ধরনের নয়েজ বা শব্দ থাকা চলবে না। কিংবা মনোযোগ অন্যদিকে যাওয়া যাবে না। বুয়েটে যারা পড়াশোনা করে, তাদের প্রতিনিয়ত পড়ালেখার মধ্যেই ডুবে থাকতে হয়। গবেষণা আর থিসিস নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতে হয় যে, দিন-রাত এক হয়ে যায়। অন্যদিকে, মনোযোগ দেয়ার সুযোগ থাকেই না বললে চলে। এই যে, ছাত্ররাজনীতি যাতে বুয়েটে না চালু করা হয়, এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, তাতে তাদের পড়াশোনার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের মিটিং-মিছিলে যে সময় দিতে হচ্ছে, এ সময় তাদের পড়াশোনা থেকে মাইনাস হয়ে যাচ্ছে। ক্লাস মিস হচ্ছে, পড়ার সময় মিস হচ্ছে। আবার দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। তারপরও তারা আন্দোলনে নিজেদের মূল্যবান সময় দিচ্ছে শুধু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। ছাত্ররাজনীতি চালু হলে তাদের ভবিষ্যতের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাবে। গবেষণা কিংবা পড়াশোনায় মন দিতে পারবে না। তাদের পড়াশোনার ভবিষ্যত রক্ষার জন্যই তারা ছাত্ররাজনীতি চালু করতে দিতে নারাজ। তারা ভাল করেই জানে, ছাত্ররাজনীতি চালু হলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে! বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। ছাত্ররাজনীতির কারণেই আবরারের মতো মেধাবীকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এর আগে গুলিবিদ্ধ হয়ে মেধাবী ছাত্রী সনিকে মরতে হয়েছে। বুয়েটে ছাতরাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তার পরিবেশ কেমন ছিল, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা খোলা চিঠিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথায় উঠে এসেছে। বুয়েটকে নিরাপদ ও বিতর্কমুক্ত রাখতে তারা কি করবে তারও প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছে। তারা শুধু চায়, পড়াশোনার জন্য রাজনীতিমুক্ত শান্তিময় একটি পরিবেশ। খোলা চিঠিতে তারা লেখে, আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না; আমরা শুধু দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি, দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যা¤পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনার। ঘটেছে হত্যাকা-ের ঘটনাও। খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে বুয়েট প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই, দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যা¤পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো মুহূর্তে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যা¤পাসে দেখলে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকান্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ, সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিঘ্রই। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা আপনার হাজারো সন্তান, আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি। চিঠিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই আকুতিতে ছাত্ররাজনীতির প্রতি তাদের ভীতসন্ত্রস্ততা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রয়েছে অসহায়ত্বও।
তিন.
বুয়েটে কেন ছাত্রলীগ রাজনীতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তা নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা চলছে। তবে হঠাৎ করে যে ছাত্রলীগের প্রবেশ ঘটেনি, তা পরবর্তীতে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের মন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগ প্রস্তুতি নিয়েই বুয়েটে প্রবেশ করে। মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে মৌলবাদী সংগঠনের তৎপরতার কথা উঠে এসেছে। বিষয়টি এমন, এদের দমন করতে হলে ছাত্রলীগের প্রয়োজন। ছাত্রলীগ ছাড়া আর কেউ এদের শায়েস্তা করতে পারবে না। কাজেই বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি চালু করতে হবে। অথচ দেশের আর কোনো ছাত্র সংগঠন এ দাবি করেনি। ছাত্রলীগের এই রাজনীতি চালু করা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর পেছনে একটি দেশের কূটচাল থাকতে পারে। রাজনীতিমুক্ত দেশের বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর মেধাবীরা বের হয়ে আসে। দেশের প্রযুক্তি এবং উন্নয়নে তারা কাজ করে। কোনো একটা উসিলা দিয়ে অধ্যয়নরত মেধাবীদের যদি ডিস্টার্ব করা যায়, তাহলে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের মেধা ধ্বংস হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দেশটির লোকজন আমাদের দেশে ঢুকাতে পারবে। ইতোমধ্যে দেশটির কয়েক লাখ লোক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। সে চাইছে, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশ যদি ধ্বংস করে দেয়া যায়, তাহলে এখান থেকে মেধাবীরা বের হবে না। এজন্য, মৌলবাদের ধোঁয়া তুলে কৌশলে ছাত্রলীগকে দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ইতিহাস শিক্ষাঙ্গণে কেবল নৈরাজ্য, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, আন্তঃকলহ, টর্চার সেল ইত্যাদি সৃষ্টি করা। তার ভাল কোনো কাজের কথা শোনা যায় না। ছাত্রলীগ কি বুঝতে পারছে, তারা যে প্রকারন্তরে কোনো একটি দেশের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে? অতি সূক্ষ্মকৌশলে তাদের ব্যবহার করে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গণে নানা ধরনের অপকর্ম করাচ্ছে? তার যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা কি রক্ষা করতে পারছে? নানা অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগ যে একটি ক্যাডার বাহিনীতি পরিণত হয়েছে, সেটা কি বুঝতে পারছে? ছাত্রলীগ শুনলেই ভক্তি ও সম্মানের পরিবর্তে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি জন্মায় কেন? শিক্ষাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে পারে না কেন? এসব বিষয় কি ছাত্রলীগ বিবেচনা করে? নিজের সাফাই না গেয়ে ছাত্রলীগকে আত্মপোলব্ধি করতে হবে। সব জায়গায় রাজনীতি করতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গণে সব কাজ ও মাতব্বরি ছাত্রলীগকেই কেন করতে হবে? বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি না করলে ছাত্রলীগের কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে? চার বছর পরই বা কেন তারা এমন উঠেপড়ে লাগবে? মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের সন্দেহ থাকলে সেটা প্রশাসন দেখবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো বলেছে, তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ছাত্রলীগের বুয়েটে প্রবেশ নিয়ে এখন নানাজনে নানা কথা বলছে। তারা বলছে, ছাত্রলীগ তার অপকর্মের নতুন ক্ষেত্র খুঁজে নিতে এ কাজ করছে। তা নাহলে, এখানে অন্যকোনো ছাত্রসংগঠন সক্রিয় না হলেও ছাত্রলীগ কেন হবে? ছাত্রলীগ যতই বলুক না কেন, সে কোনো র্যাগিং, বুলিং থেকে শুরু করে বিশৃঙ্খলা করবে না। ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ইতিহাস পর্যালোচনায় সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বিশ্বাস করা খুব কঠিন। আরেকটি যে আবরার ঘটনা ঘটবে না, কিংবা টর্চার সেল, নির্যাতন, টেন্ডারবাজির ঘটনা ঘটবে না, আর যাই হোক এ গ্যারান্টি দেয়া ছাত্রলীগের পক্ষে অসম্ভব।
চার.
নিবন্ধের শুরুতে যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের শিক্ষকের কথা উল্লেখ করেছি, তিনি কথা প্রসঙ্গে বললেন, আমাদের দেশে মেধার অভাব নেই। তবে মেধা কাজে লাগানোর সুযোগ কম। যেমন আমার পরিচিত একজন জাপান থেকে ন্যানো টেকনোলজিতে পিএইচডি করে এসেছে। দেশে এসে তিনি তা কাজে লাগাতে পারছেন না। কারণ, এ প্রযুক্তির কোনো সুযোগই দেশে নেই। ফলে তার মেধার অপচয় হচ্ছে। হয়ত, একসময় তিনি দেশ ছেড়ে যাবেন। তাকে যেতেই হবে। কারণ, তার মেধা তিনি অপচয় করতে দেবেন না। মেধাই তাকে দেশ থেকে বের করে নিয়ে যাবে। আমিও আমার শিক্ষার্থীদের বলি যদি দেশের বাইরে ভাল সুযোগ পাও তাহলে চলে যাও। এখন আরও বেশি করে বলতে হবে। কারণ বুয়েটে রাজনীতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা যে কত বড় ক্ষতি করা হলো, তা অচিরেই টের পাওয়া যাবে। বলা বাহুল্য, বুয়েট মেধাবীদের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এখান থেকে অনেক মেধাবী বের হয়। অনেকে ভাল রেজাল্ট করে স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করছে। ইউরোপের দেশগুলোতে আমাদের প্রকৌশলীদের ব্যাপক চাহিদা। এর কারণ হচ্ছে, ঐসব দেশে গবেষণার সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, কিন্তু তাদের মেধাবী কমে গেছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে মেধা আছে, গবেষণার সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে বিদেশে আমাদের মেধাবীদের চাহিদা বেশি এবং সুযোগ পেলেই তারা চলে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে গ্লোবালি নিজেদের রিপ্রেজেন্ট করছে। দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করছে। এখন বুয়েটে রাজনীতি ঢুকিয়ে মেধা তৈরির এই কারখানা কৌশলে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র কিনা, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। শুধু একটি ছাত্র সংগঠনের দাবির কারণে বুয়েটকে রাজনৈতিক অঙ্গণে পরিণত করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখতে হবে। বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই তাদের প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে রাখতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা যে আবেদন করেছে, তা নিশ্চয়ই তিনি বিবেচনা করে দেখবেন।