নিজস্ব প্রতিবেদক | বেসরকারি স্কুল-কলেজে অ্যাডহক বা অস্থায়ী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর অ্যাডহক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে নিয়মিত গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিতে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ. জেড মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধান মালা, ২০২৪’ এর প্রবিধি ৬৪ এর আওতায় অ্যাডহক কমিটি গঠনপূর্বক ওই অ্যাডহক কমিটি কর্তৃক আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিয়মিত কমিটি গঠন করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডসমূহকে অনুরোধ করা হলো।
গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২০ আগস্ট সব বেসরকারি স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের অপসারণ করে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের নতুন দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, ইউএনওরা। তবে সভাপতি অপসারণ হলে কমিটির অন্য সদস্যরা নিজ নিজ পদে বহাল ছিলেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রবিধানমালার পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিধান অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সেই কমিটির মাধ্যমে ছয় মাসের মধ্যে নিয়মিত কমিটি গঠন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বোর্ডগুলো বলা হয়েছে।
এ ছাড়া কমিটির সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করার বদলে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রসঙ্গত, পরিচালনা কমিটি অর্থাৎ স্কুলের ক্ষেত্রে ১২ সদস্যবিশিষ্ট ‘ম্যানেজিং কমিটি’ আর কলেজের ক্ষেত্রে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ‘গভর্নিং বডি নামে অভিহিত। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে পালটে যায় এই বিধান। নতুন নির্দেশনা আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নতুন দায়িত্ব পাবেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা।
তবে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেহেতু রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় নেই তাই এমন নির্দেশনা আপাতত কাজে আসছে না। যদি কমিটি নির্বাচনের ঘোষণা আসে সেক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কাজে আসবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের) গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা ২০২৪’ এর প্রবিধি ৬৪ (৩) এর ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনাক্রমে,’ শব্দাবলির কার্যকারিতা সম্ভব নয় এই প্রবিধানমালার প্রবিধি ৭৫ এর ক্ষমতাবলে প্রবিধি ৬৪ (৩) এর এই শব্দাবলির স্থলে নিচের শব্দাবলি প্রতিস্থাপন করা হলো।
বিদ্যমান শব্দাবলি: ৬৪(৩) স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনাক্রমে। প্রতিস্থাপিত শব্দাবলি: ৬৪(৩) মহানগরীর ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার। অন্যান্য ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালার ৬৪ ধারায় যা বলা হয়েছে-
অ্যাডহক কমিটি:
কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গভর্নিংবডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনে ব্যর্থ হলে অথবা সঠিকভাবে গঠিত না হলে বা বাতিল হলে বা বিদ্যমান কমিটি ভেঙে দেয়া হলে অনধিক ছয় মাসের জন্য নিম্নরূপ চার সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠিত হবে।
চার সদস্য হলো: ১. সভাপতি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত। ২. শিক্ষক প্রতিনিধি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষক। ৩. অভিভাবক প্রতিনিধি জেলা সদরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কর্তৃক এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত একজন অভিভাবক। ৪. সদস্য-সচিব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান (পদাধিকার বলে)।
এ ছাড়াও অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে এবং অনুমতি প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠনপূর্বক অনুমোদনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে হবে। সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহিত আলোচনাক্রমে, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, খ্যাতিমান সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধি অথবা কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের মধ্য থেকে তিন জনের একটি তালিকাসহ অন্যান্য সদস্যের মনোনয়ন গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কাছে পাঠাবেন।
৬৪ এর 8 উপধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষা বোর্ড, সভাপতি মনোনয়নের জন্য প্রবিধান (৩) এর অধীন প্রস্তাবিত তিন জনের মধ্য থেকে একজনকে অথবা, পরিস্থিতি বিবেচনায়, ভিন্ন কোনো ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনীত করতে পারবে এবং অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এ ছাড়াও বলা হয়েছে, অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ হবে অনুমোদিত হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাস। অ্যাডহক কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গভর্নিংবডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে, পুনরায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করা যাবে, তবে তা দুই বারের বেশি না। অ্যাডহক কমিটি যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকে গভর্নিংবডি বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ব্যতীত এই কমিটির সভাপতি ও সদস্যমণ্ডলী ন্যূনতম পরবর্তী দুই বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কমিটির যেকোনো পদের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
একই প্রবিধানমালার ৭৫- ধারায় রহিতকরণ ও হেফাজতকরণ সম্র্পকে বলা হয়েছে, এই প্রবিধানমালা কার্যকর হবার সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভার্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০০৯ অতঃপর এই প্রবিধানমালা বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্বারা রহিত হবে।
প্রসঙ্গত, পরিচালনা কমিটি অর্থাৎ স্কুলের ক্ষেত্রে ১২ সদস্যবিশিষ্ট ‘ম্যানেজিং কমিটি’ আর কলেজের ক্ষেত্রে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ‘গভর্নিং বডি নামে অভিহিত। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে পালটে যায় এই বিধান। নতুন নির্দেশনা আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নতুন দায়িত্ব পাবেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা।