ফিচার ডেস্ক | মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ। এদিন পশু কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ধর্মীয় রীতি অনুসারে কোরবানির মাংস তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়- একটি ব্যক্তির নিজের বাড়ির জন্য, একটি তাদের আত্মীয়দের জন্য ও একটি দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য।
পুরো বিশ্বের মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা এই দিনটি পালন করেন ত্যাগের মহিমায়। তবে একেক দেশে ঈদুল আজহা পালন করার কিছুটা ভিন্নতা আছে। এই ভিন্নতা মূলত দেশে দেশে সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশে কীভাবে পালিত হয় ঈদুল আজহা-
পাকিস্তান :
পাকিস্তানে ঈদুল আজহা চারদিন ধরে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নামাজের জন্য রওনা দেন। তারপর বাড়ি ফিরে গরু, ছাগল, ভেড়া বা উট কোরবানি করেন। পাকিস্তানে সবাই পালিত পশুই কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করেন।এজন্য অনেক আগ থেকেই পশু কেনাবেচা শুরু হয়। অন্তত একমাস আগে তারা পশু কিনে নিজের যত্ন করেন। সরকারি ছুটি থাকায় যে যার মতো করে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নেন। অনেকেই ঘুরতে বের হন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত :
পশু কোরবানির আগে সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয় সেখানে। আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদে প্রতিবছর ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ৩-৪ দিন ধরে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। যদিও সেখানকার মানুষেরা নিজের বাড়িতে পশু জবাই করতে পারেন, তবে যথাযথভাবে কোরবানি ও এর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের লক্ষ্যে কসাইখানার স্থান নির্ধারণ করা থাকে। এ কারণে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কারের বিষয়ে আর ভাবতে হয় না তাদের।
সংযুক্ত আর আমিরাতের মতো ইরানেও পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান রাখা হয়। এর বাইরে পশু জবাই করা বেআইনি হতে পারে। ইরানে খুব ভোরেই কোরবানি দেওয়া হয়। সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের আগে কসাইখানায় রওনা হন সবাই মাংস সংগ্রহ করতে। তারপরে তারা নতুন পোশাক পরে নামাজ আদায় করেন। আর সারাদিন প্রিয়জনদের সঙ্গে খাসি বা গরুর মাংসের নানা পদ খেয়ে উদযাপন করেন ঈদুল আজহা।
তাজিকিস্তান :
তাজিকিস্তাসের মানুষেরা ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু করেন ঈদুল আজহা। তারপর শিশুরা প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখান থেকে তারা পুরষ্কার ও মিষ্টি পেয়ে খুশি হয়। এরপর পুরুষরা পশু কোরবানির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাজিকিস্তানেও অনুমোদিত স্থান ব্যতীত কোরবানি দেওয়ার নিয়ম নেই। মাংস নিয়ে বাড়িতে আসতেই তা রান্না শুরু করেন নারীরা। তাজিকিস্তানে বাড়ির শিশুরাই ঈদের দিন খাবার পরিবেশন করে। অতিথিকে প্রথমে ফল, পেস্ট্রি ও বিস্কুট নাস্তা দেওয়া হয়।
তারপরে মাংসের বাহারি পদ দিয়ে খাবার সম্পন্ন করার পর কেক ও মিষ্টি মুখ করে সবাই। তাজিকিস্তানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এই দেশের প্রতিবেশীরা অবাধে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে পারে, কারণ তাদের সবার ঘরের দরজায় প্রতিবেশীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে।
তুরস্ক :
ঈদুল আজহাকে তুর্কি ভাষায় কুরবান বায়রামি বলা হয়। এদেশের মানুষেরাও ঈদের দিন শুরু করে নামাজের মাধ্যমে। তারপর বাড়ি ফিরে আল্লাহর নামে পশু (সাধারণত ভেড়া) কোরবানি দেয়। তুরস্কেও অনুমোদিত কসাইখানা/বসাখানা ছাড়া অন্য কোথাও পশু কোরবানি করা বেআইনি। এগুলোর বেশিরভাগই বড় শহরের উপকণ্ঠে নির্মিত। তরস্কের অনেকেই পশু বলি দেওয়া এড়িয়ে যান, এর পরিবর্তে তারা সমমূল্যের অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করতে পারেন।
আফ্রিকান নেশনস :
সমগ্র আফ্রিকার বেশিরগভাই মুসলিম দেশ যেমন-তিউনিসিয়া, মরক্কো ও মিশরে, ঈদুল আজহা উদযাপন শুরু হয় ঈদের নামাজ আদায় করার মধ্য দিয়ে। ভেড়া, ছাগল বা মেষের মতো পশুই তারা বেশি কোরবানি দেয়। এরপর পরিবার নিয়ে মজাদার সব পদের স্বাদ উপভোগ করেন।
ইন্দোনেশিয়া :
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহা উদযাপনের রীতিনীতি অনেকটাই পাকিস্তানের মতোই। ঈদের নামাজের পরে তারা রাস্তায় কোরবানি করে। এই সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী, পরিবার, বন্ধুসহ সবাই জড়ো হয় প্রক্রিয়াটি দেখতে।
ভারত :
ভারতীয় মুসলমানরা সাধারণত ঈদুল আজহার জন্য ছাগল বা ভেড়া কোরবানি করে থাকেন। ঈদের নামাজের জন্য সেখানে নির্ধারিত এলাকা আছে। যেহেতু ওই দেশে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয় তাই ভারতীয় মুসলমানরা সাধারণত তাদের বাড়িতে বা স্থানীয় ইসলামিক কেন্দ্রে একটি ছাগল বা একটি ভেড়া কোরবানি দেন ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য। মাংস প্রস্তুত হওয়ার পরে বাড়িতে এনে রান্নার কাজে লেগে পড়েন সবাই। সাধারণ জনগণের অসুবিধা এড়াতে সেখানকার কর্তৃপক্ষ রাস্তায় পশু কোরবানি করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স
Copyright © 2024 বিজনেস ডাইজেস্ট. All rights reserved.