আন্তর্জাতিক ডেস্ক | কোনো শাস্তি ছাড়াই মুক্তি পেয়েছেন ইরানে অর্ধনগ্ন হয়ে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো সেই তরুণী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ। হাসপাতালে নেওয়ার পর মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে শাস্তি ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নভেম্বরের শুরুতে তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে অন্তর্বাস বাদে শরীরের সব কাপড় খুলে প্রতিবাদ জানান ওই তরুণী। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ওই তরুণীকে আটক করলে নিন্দা জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ঠিকভাবে হিজাব না পরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা তাকে হেনস্তা করেছেন। এর প্রতিবাদে তিনি কাপড় খুলে প্রকাশ্যে হাঁটাহাঁটি করেন। ওই শিক্ষার্থীকে পরবর্তী সময়ে একটি মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। যদিও তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, গত ১৫ নভেম্বর ইরানে নারীরা হিজাব পরতে অনাগ্রহ দেখালে তাদের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনার কথা জানায় দেশটির সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইরানের নীতি ও নৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী ও পরিবার বিভাগের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তেহরানে মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তরে নারী ও পরিবার বিভাগের প্রধান মেহেরি তালেবি দারেসতানি ক্লিনিক খোলার এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, হিজাব পরতে না চাইলে তাদের ক্লিনিকে বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ ঘোষণায় ক্ষোভ জানায় ইরানের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইরানের সাংবাদিক সিমা সাবেত বলেন, এই উদ্যোগ লজ্জাজনক। হিজাব পরতে অনিচ্ছুক নারীদের জন্য ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা ভয়ংকর। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের মতাদর্শের সঙ্গে মিল না হলে সমাজ থেকে নারীদের আলাদা করে ফেলা হবে।
ইরানি মানবাধিকার আইনজীবী হোসেন রাইসি বলেন, হিজাব আইন ভঙ্গকারীদের জন্য যে ক্লিনিক খোলার কথা বলা হচ্ছে, এটি ইসলামিকও না আবার ইরানের আইনের সঙ্গেও যায় না। যে বিভাগ থেকে এই ঘোষণা এসেছে তা সব নারীর জন্য সতর্কতামূলক। এই বিভাগটি সরাসরি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অধীনে পরিচালিত হয়।
অনেকদিন ধরেই হিজাব আইন কার্যকরে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ইরান সরকার। যারা আইন ভঙ্গ করছেন তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তেহরানে মাথায় ঠিকমতো হিজাব না থাকায় কুর্দি নারী মাহশা আমিনিকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নৈতিক পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ইরান।