1. admin@businessdigestbd.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া কোন সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না

বিজনেস ডাইজেস্ট ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯৪ বার পঠিত

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স :
সরকারের অভিযোগ আমলে না নিলে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গত রোববার বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা (ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল….) বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সুপারিশ শোনে না। কারণ, গুজব প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এখানে কোনো অফিস নেই। তিনি আরো বলেছেন, তারা যে আমাদের কথা শোনে না এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জানানো হবে। প্রয়োজনে কিছু সময়ের জন্য এসব সেবা বন্ধ থাকবে। তার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের অভিযোগ ও সুপারিশ না শোনা কিংবা গুজব ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (সাময়িক হলেও) বন্ধ করে দেওয়া কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এর বিকল্প কোনো পথে উদ্ভূত ও বর্ণিত সমস্যার কোনো সমাধান করা যায় কিনা, সেটা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বেরই অনিবার্য বাস্তবতা। এখানে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি বন্ধ করলেই যে গুজব রটনা কিংবা সাইবার অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে, তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের যে অভিযোগ, অন্যান্য দেশের সরকারেরও এমন অভিযোগ থাকতে পারে। তারা কি তবে সমাধান হিসাবে সেসব বন্ধ করে দিয়েছে? বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়, বরং বহাল রেখে কীভাবে গুজব ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে পথ অবলম্বনই বাঞ্ছনীয়।
কারণ যাই থাক, অভিযোগ যত যৌক্তিক হোক, অত্যন্ত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল বন্ধ করে দিলে দেশে-বিদেশে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। দেশের ইয়াঙ্গার জেনারেশন এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। তারা এ সেবা না পেলে সরকারের উপর অসন্তুষ্ট ও বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়বে। ইয়াঙ্গার জেনারেশনকে ক্ষেপিয়ে তোলা কোনো সরকারের জন্যই ইতিবাচক হতে পারে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ কারণে সরকারকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সারাবিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৃহত্তম মাধ্যমও বটে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই মাধ্যমের ভূমিকা অন্যান্য মাধ্যমের থেকে অনেক বেশি। এটা সত্য, যথেচ্ছ মত প্রকাশ কাম্য না হলেও অনেক সময় তা হয়। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। এও দেখা গেছে, আইন করে গুজব বা সাইবার অপরাধ শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সরকারের এমনিতেই দুর্নাম রয়েছে মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার। সরকার ইতোপূর্বে সংবাদপত্র, টিভি ইত্যাদি বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের সংবাদপত্র ও অন্যান্য মিডিয়া সেল্ফ সেন্সরশিপ অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে মিডিয়ার স্বাধীনতাকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এমন অভিযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার খর্ব করার বিষয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বহু বিবৃতি দিয়েছে সরকারের সমালোচনা করে। দেশে গণতন্ত্রও এখন নিয়ন্ত্রিত। সার্বজনীন গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকার কারণে মতপ্রকাশের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারছে না।

এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমর্যাদা যতটা অবশিষ্ট আছে, তাও থাকবে না। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য সরকার বেশ কিছু আইন করেছে। এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক-রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। এসব আইনের অপব্যবহার হয়েছে যাচ্ছেতাইভাবে। আইন সংশোধন ও গণমুখী করার দাবি আগ্রাহ্য হয়েছে। সরকার বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহ্য করতে রাজি না। পর্যবেক্ষকদের অভিমত: সরকার তার বিরুদ্ধে কোনোরূপ সমালোচনা বরদাশত করতে সম্মত নয়, এমনই অসহিষ্ণু। সমালোচনা বন্ধ করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ও আইন প্রণয়ন করছে। ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃত্ববাদী সরকারের কুখ্যাতি অর্জন করেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, গণতন্ত্রকে স্বেচ্ছাতন্ত্রে রূপান্তর করে, মতপ্রকাশে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করে কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করে কোনো সরকারই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না। একথা স্মরণে রেখে সরকার তার পথনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে, এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। আইনশৃংখলাসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি যে সিদ্ধান্তই নিক। সেটা পর্যালোচনা করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা আশা করি, সে সিদ্ধান্ত সুবিবেচনা-প্রসূত ও গণবান্ধবই হবে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর